Improve your Facebook Security
আপনার নিজের স্বার্থে ফেসবুক এ্যাকাউন্টকে সিকিউর রাখতেই হবে
মাঝে মাঝে হঠাৎ চোখে পড়ে এমন কিছু অশ্লীল ছবি বা ভিডিও যা শেয়ার করেছে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কোন সর্বোচ্চ শিক্ষিত ভদ্র আপুটি। আসলে এটি হয়ত তিনি নিজে শেয়ার করেন না কিন্তু তার অগোচরে ফেসবুকের কোন এ্যাপস এই কাজটি করে। একটু আগে খুলনা ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েটস গ্রুপে এমন একটি পোস্ট চোখে পড়ল একজন আপুর নামে। শুধু যে এটাই প্রথম তা নয়, অনেক কম্পিউটার গিকেরও এমন ফেসবুক হ্যাক হওয়ার রেকর্ড আছে। হ্যাকারদের নানান উদ্দেশ্য থাকে। তবে ভয়ংকর উদ্দেশ্য হল আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করে আপনার জন্ম তারিখ, নাম ধাম, ঠিকানা, পাসওয়ার্ড যোগাড় করে আপনার ব্যাংক ব্যালান্স হাতিয়ে নেয়া। ছোট উদ্দেশ্য হল আপনার একাউন্ট ব্যবহার করে তাদের পেজের বা সাইটের কন্টেন্ট শেয়ার করে ভিজিটর বাড়ানো। বাংলাদেশে যেহেতু এখনো ইন্টারনেটে ব্যাংকিং ঐভাবে চালু হয়নি সেহেতু ছোট উদ্দেশ্যটাই প্রধান থাকে। এটি কিন্তু অনেক বিব্রতকর। আবার ফেসবুক মানুষের নিত্যসঙ্গী। তাই ফেসবুক কে সিকিউর করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
প্রথমে প্রয়োজন কমন সেন্স। প্রাইভেসী সম্পর্কে ধারনা। যে হারে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে সেলফি দেন অনেকে তাতে কয়দিন পরে হয়ত মানুষের মুখের আদলই বদলে যাবে। যা কিছু হোক সেলফি দিতেই হবে ফেসবুকে বা যা কিছু ঘটুক স্ট্যাটাস দিয়ে জানাতেই হবে এ ধারনা যাদের আছে তারা মানসিক রোগী। রিং রোডে একটা দোকানের সামনে দেখি দিন রাত কিছু ছেলেমেয়ে বসে দুই হাতে মোবাইল টিপাটিপি করে। ঐ খানে একটা ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের নেটওয়ার্ক আছে। ফ্রি আছে বলেই দিন রাত অপ্রয়োজনে ফেসবুক চালানোটাও মানসিক রোগ। একজন একটা এ্যাপস দিয়ে বিশেষ কিছু জানাল, আপনিও গবেটের মত না ভেবেই ঐ এ্যাপস ইন্সটল করে বসলেন। ব্যাস, এবার আপনার ফ্রেন্ডরাও জেনে গেল আপনি ঐ এ্যাপস ব্যবহার করেছে। ফেসবুক বা ঐ এ্যাপস কোম্পানি ফ্রি ফ্রি এত সেবা দিচ্ছে ? না, এর পিছনে আছে বাবসা। আপনি যেখানে শুধুই টার্গেট মার্কেট। বেশীরভাগ এ্যাপসই ক্ষতিকর। ফেসবুকের একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে কিন্তু এ্যাপস যে কেউ বানাতে পারে। সেখানে তারা কতটা নৈতিক মানদন্ড বজায় রেখেছে এন্ড ইউজারের সেটা বোঝার উপায় নেই। ফেসবুক ছাড়া চলবে না। সুতরাং পঞ্চ ইন্দ্রিয় সক্রিয় রেখেই ফেসবুক চালাতে হবে।
১. আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড অন্য কারো সঙ্গে, এমনকি অতি কাছের মানুষের সঙ্গেও শেয়ার করবেন না। কেননা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি একান্তই আপনার। এছাড়া কোনো লোভনীয় লিঙ্ক দিয়ে আপনার ফেসবুকের আইডি আর পাসওয়ার্ড দিতে বলা হলে, এসব ফাঁদে পা দিতে যাবেন না। ফেসবুকের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে কেবল www.facebook.com ঠিকানা ছাড়া অন্য কোনো লিংকে লগইন করবেন না। অন্যথায় ফিশিংয়ের শিকার হবেন, বরশি দিয়ে আপনি মাছ হয়ে শিকার হয়ে যাবেন হ্যাকারের। চ্যাটে বা পোস্টে কেউ কিছু পাঠালে জিজ্ঞেস করে নিন লিংক বা ফাইলটি কিসের? ফাইলগুলো ক্লিক করার আগে অনলাইন স্ক্যানার দিয়ে চেক করে নিতে পারেন। অনলাইন স্ক্যানারের মধ্যে খুব ভাল একটি সাইট ভাইরাস টোটাল। www.virustotal.com সাইটটিতে গিয়ে ঐ সাইটটি বা ফাইলটি স্ক্যান করে নিন। এছাড়া আপনার ব্রাউজারটি সব সময় আপডেটেট রাখুন।
২. প্রথম কথা হল আমার কথা যদি শুনেন তবে আমি বলব – ফেসবুকের এ্যাপস অপশনটাই ডিজ্যাবল করে দিন। ফেসবুকের স্ট্যান্ডার্ড অপশনই যথেষ্ঠ। কোন এ্যাপস নয়। এর পরও যদি আপনার এ্যাপস লাগে তবে আজেবাজে অ্যাপস ব্যাবহার করবেন না। ফেসবুকে বিভিন্ন মজার গেমস, ফানসহ আরো অ্যাপস আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এসব অ্যাপস চালু করার ফলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অনেক তথ্য অ্যাকসেস করার অনুমতিও দিয়ে দিতে হয়। ফলে ব্যক্তিগত তথ্য আর নিরাপদ থাকে না। তাই অ্যাপস চালানোর আগে ভালভাবে বুঝে নিন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসগুলো ডিজঅ্যাবল করে দিন।
৩. ফেসবুকে এ্যাকাউন্টের মেইন বা প্রাইমারি ইমেইলের পাশাপাশি আরেকটি ইমেইল যোগ করুন, যা সেকেন্ডারি ইমেইল হিসেবে থাকবে। যদি কোনো কারণে ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনার সেকেন্ডারি ইমেইল দিয়ে ফেসবুক আইডি রিকভার করতে পারবেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ফেসুবকে আপনার পাসওয়ার্ড যদি হয় ১২৩৪৫৬ বা আপনার নিজের ফোন নম্বর, নাম, রোল নম্বর, প্রিয়জনের নাম, তাহলে পাসওয়ার্ড দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা। কেননা এর ফলে যে কোনো মুহূর্তে হ্যাক হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় এ্যাকাউন্টটি। পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন ইউনিক কিছু যা অন্যের অনুমানের বাইরে এবং তা অবশ্যই এনক্রিপ্টেট করে দেবেন। আর পাসওয়ার্ডটি এক মাস পর পর বা ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করুন । পাসওয়ার্ড কে শক্তিশালী রাখুন। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সাধারনত স্মল লেটার, ক্যাপিটাল লেটার, নাম্বার, স্পেশাল ক্যারেক্টারের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। চেষ্টা করবেন ১২ অংকের বেশী ক্যারেকটারের পাসওয়ার্ড দিতে। যেমনঃ I#!Love8521You
৫. লগইন এ্যাপ্রুভাল চালু করুন। এর ফলে আপনার পাসওয়ার্ড কেউ জানলেও আর হ্যাক হবে না আপনার এ্যাকাউন্ট। ফেসবুকের একটি দারুন এবং কার্যকর অপশন হচ্ছে লগইন এ্যাপ্রুভাল। এটি হচ্ছে, এমন একটি সিকিউরিটি ব্যবস্থা, যেখানে দুটি স্তরে আপনার এ্যাকাউন্ট যাচাই করা হবে। প্রথমে আপনি ঠিক ঠাক পাসওয়ার্ড দিতে পারলে তারপর আপনার ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে একটি সিকিউরিটি কোড পাঠানো হবে। যা শুধু আপনার ফোনেই আসবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ফোনে আগত কোডটি আপনি না দিচ্ছেন ততক্ষণ আপনার এ্যাকাউন্টে লগইন করা যাবে না। সুতরাং আপনার এ্যাকাউন্ট আপনি ছাড়া আর কেউ লগইন করতে পারবেনা। যখনই ভিন্ন কোনো ডিভাইস থেকে আপনার এ্যাকাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করা হবে তখনই আপনার ফোনে সিকিউরিটি কোড আসবে এবং ফেসবুক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে জানিয়ে দেবে, কেউ একজন আপনার এ্যাকাউন্ট লগইন করার চেষ্টা করছে। যেভাবে চালু করবেন লগিন এ্যাপ্রুভাল: Settings>Security>Log In Approvals>Edit এ যান।
লগইন এ্যাপ্রুভাল চালু করার পর, আপনার ডিভাইসটি যদি পারসোনাল হয়, তাহলে ব্রাউজার সেভ করে নিন। এতে বার বার আপনার কাছে কোড চাইবেনা। তবে অন্য কোনো ডিভাইস থেকে লগইন করতে চাইলেই আপনার ফোনে একটি কোড আসবে এবং এ কোড ছাড়া কোনো অবস্থাতেই লগইন করা যাবে না। পাশাপাশি আপনার কাছে একটি ইমেইলও চলে যাবে যে, কেউ অন্য ডিভাইস থেকে আপনার এ্যাকাউন্ট লগইন করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী, তা ইমেইলে ফেসবুক বলে দেবে।
৬. কোড জেনারেটর চালু করুন। ধরুন আপনি লগইন এ্যাপ্রুভাল চালু করলেন। কিন্তু আপনার ফোন নেটওয়ার্কের বাইরে বা আপনার ফোন নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ইউজ করতে পারেন কোড জেনেরাটর। যেখানে আপনাকে বেশ কিছু কোড দেওয়া হবে এবং কোড চাইলে এই কোড দিয়ে লগইন করতে পারবেন । তবে এটি চালু করার জন্য Settings>Security>Code Generator >Edit এ যান। কোড জেনারেটর চালু করার পর কিছু কোড দেয়া হবে যেগুলো সংরক্ষণ করা লাগবে।
৭. লগিন সেশন চেক করুন। ফেসবুক আপনার লগইন এর সময় আপনি কোনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন, কোন লোকেশন থেকে, কোন ডিভাইস দিয়ে তা আপনার সুবিধার্থে জমা রাখে। যা আপনি প্রতিনিয়ত চেক করে বুঝতে পারবেন আপনার এ্যাকাউন্ট অন্য কেউ ব্যবহার করছে কিনা। এজন্য Settings>Security>Where You`re Logged In >Edit এ যান। এবার আপনি যে লোকেশনে সর্বশেষ ব্রাউজিং করেছেন, আপনার ওএস, সময় দেখাবে। যদি দেখেন মিল নেই, তাহলে ধরে নেবেন আপনার এ্যাকাউন্টটিতে অন্য কেউ প্রবেশ করছে। এরকম কিছু দেখলে End Activity তে ক্লিক করুন। অর্থ্যাৎ ঐ সেশনটি বাতিল হয়ে যাবে। এরকম সেশন একটি চালু রাখুন। বাকীগুলো End Activity দিয়ে বন্ধ করে দিন।
৮. ফেসবুক ব্যবহার শেষে সবসময় লগ-আউট করুন। অনেকে সাইবার ক্যাফে বা বন্ধুর মোবাইল বা পিসি থেকে লগইন করার পর আর লগআউট করেন না। এতে বেহাত হতে পারে আপনার অ্যাকাউন্টটি। তাই অন্য ডিভাইস থেকে ব্যাবহার করার পর অবশ্যই লগআউট করে নেবেন। লগ ইন করার সময়ও কখনোই রিমেম্বার পাসওয়ার্ড অপশন চালু রাখবে না।
৯. আপনার ই-মেইল ঠিকানাটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটিকেও টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন দিয়ে রাখুন যাতে কেউ লগইন করলেও সিকিউরিটি কোড আপনার ফোনে আসে এবং আপনি ছাড়া আর কেউ লগইন করতে না পারে। কারন আপনার ই-মেইল দিয়ে কেউ আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিতে পারে।
১০. কোনভাবে একবার যদি আপনার এ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায় বা আপনার কম্পিউটারে কোন ম্যালাওয়্যার যোগ হয়ে থাকে তবে উপরের সব স্টেপ গুলো ফলো করুন। এর পরও কাজ না হলে ভাল কোন ভাইরাস স্ক্যানার দিয়ে কপম্পিউটার স্ক্যান করুন। প্রয়োজনে অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে ইন্সটল করুন।
১১. তার পরও কোন সমাধান না পেলে ফেসবুক কে ডিজ্যাবল করে রাখুন। কোন এক্সপার্ট বন্ধুর সহযোগিতা নিন।
মনে রাখবেন, আপনি সারাদিনে ডজন ডজন স্ট্যাটাস দিয়ে আপনার ব্যাক্তিগত জীবনে অন্যদের এক্সেস দিচ্ছেন। যার পরিনতি হতে পারে অনেক ভয়ংকর যা আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।
লেখাটা শেয়ার দিয়ে সবাইকে সচেতন করুন।
Related Posts
What can be the problem if someone takes blood from his family member?
This is a frequently asked and very important question about blood donation. If you wantRead More
কেউ তার পরিবারের সদস্য থেকে রক্ত নিলে কি সমস্যা হতে পারে?
ব্লাড ডোনেশন সম্পর্কে এটা বহুল জিজ্ঞাসিত ও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। ছোট করে উত্তর শুনতেRead More
ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More
Comments are Closed