
Rape is about power, not sex
যাদের হাতে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা থাকে তারা মনে করে ধর্ষণ করে সহজেই পার পেয়ে যাবে
সাম্প্রতিক সিলেট ধর্ষণকান্ড তো এখন একেবারেই তাজা খবর। এর জন্য কোন স্ক্রীনশট দরকার নেই।
ধর্ষণ কি শুধুই ২-১০ মিনিটের যৌন উত্তেজনা প্রশমন ? এই ২-১০ মিনিটের উত্তেজনা প্রশমনের জন্য মানুষ ফেরারী জীবন বেছে নেয় ? মৃত্যুদন্ড হতে পারে জেনেও মানুষ ২-১০ মিনিটের জন্য নিজের জীবনের বাজি ধরে যেখানে ৫০/১০০ টাকার বিনিময়ে সহজেই যৌনতা কেনা যায় ? আবার ধরুন গ্যাং রেপ। একজন গনোরিয়া/সিফিলিস আক্রান্ত মানুষ তার দূর্গন্ধযুক্ত তরল ঢেলে এসেছে, অন্যজন গিয়ে সেটা নিজের শরীরে মেখে নিজেও রেখে আসছে, নিজেও সিফিলিস/গনোরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই গা ঘিনঘিনে ব্যাপারটা কি সবাই শুধুই যৌবনের তাড়না থেকে মেনে নেয় ? গবেষণা বলে ধর্ষণ যতটা না যৌন তাড়না তার চেয়ে বেশী শক্তি প্রদর্শনের জন্য উন্মত্ত আচরন। এখানে একজন ধরে নেয় তার এত ক্ষমতা যে সে একজন দূর্বল শিশু, পুরুষ বা নারীকে ধর্ষণ করলেও তার কিছু হবেনা, কোন আইন তাকে কিছু করতে পারবে না। ধর্ষণ হলো শক্তি ও ক্রোধের যৌন বহিঃপ্রকাশ। জেনে রাখুন, যৌনতা কোন ধর্ষকের প্রাথমিক বা প্রধান লক্ষ্য থাকে না। দূর্বলের উপরে শক্তি প্রয়োগের ক্রোধ দেখিয়ে ধর্ষক উল্লাসিত হয়। দূর্বল নারীর উপর পুরুষের শক্তি প্রয়োগ, শিশুর উপর শিক্ষকের বলাৎকারের শক্তি প্রয়োগ এসব। ২-১০ মিনিটের যৌনতার জন্যই শুধু একজন মানুষ এতটা নীচে নামে না।
ভারতের রাজনৈতিক নেতা যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন ‘কবর থেকে মুসলিম নারীদের লাশ তুলে ধর্ষণ কর’ – এটা কি যৌন কামনা মেটানোর জন্য ? অবশ্য তিনি ২০১৭ সালে এটা বলারও আগে এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতে। ২০১৫ সালের একটা সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন – ‘কবর থেকে লাশ তুলে গণধর্ষণ! ঘটনার তিন দিন আগে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় ২৬ বছরের ওই তরুণীর।’ কি মনে হয়? এগুলো যৌনতা থেকে করে মানুষ ? না, ধর্ষণ হলো এক প্রকার বিকৃত ক্ষমতা প্রদর্শন। এজন্য যাদের হাতে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা থাকে তারা মনে করে ধর্ষণ করে তারা সহজেই পার পেয়ে যাবে, এটা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা মহড়া।
যৌন কামনা থাকা পাপ বা অপরাধ নয়৷ কিন্তু কারও ইচ্ছার বিপরীততে গিয়ে এই সমস্ত বাসনা চরিতার্থ করা বা করতে চাওয়া একদমই সঠিক পন্থা নয়। সেটা অপরাধ, জোর করা মানেই ধর্ষণ। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বা একটা পতিতার সঙ্গেও জোর করলে সেটা ধর্ষণ। আবার শিশুদের ইচ্ছার সম্মতি নিয়ে বা কাউকে সম্মতি দিতে বাধ্য করে কামনা শেষ করাও ধর্ষণ।
চিন্তা করা কঠিন, আর তাই বেশীরভাগ মানুষ আগে বিচার করতে বসে, চিন্তা করতে নয়। তাই দেখবেন এখনো মানুষ বলছে ধর্ষকের ফাঁসি, লিঙ্গচ্ছেদ এসব হোক। কেউবা বলছে ধর্ষকের পক্ষে কেন আইনজীবী লড়বে ? এ সমস্ত কথা ও চিন্তা সেই সমাজেই হয় যেখানে মানুষ আইনের শাসন ভুলে যায়। নায্য বিচার পাওয়া ও আইনজীবী পাওয়ার অধিকার একজন সিরিয়াল কিলারেরও থাকে। আমরা মূল সমস্যা চিহ্নিত না করে আগেই ফাঁসি চাই। এত এত ক্রসফায়ার, ফাঁসি, জেল এসবে কি মাদক পাচার বা ধর্ষণের মত অপরাধ কমেছে ? একজন অপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তি জেল, ফাঁসি এগুলো পাবে। সভ্য সমাজে শাস্তি পেতেই হয় প্রত্যেক অপরাধীকে। কিন্তু অপরাধ কমানোর কোন ব্যবস্থা করা গেলে অপরাধীর সংখ্যাও কমে যায়, কেউ ভিক্টিম হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করে না বা সারাজীবন পৃথিবীকে ঘৃনা করে বেঁচে থাকা লাগেনা। সেজন্য অপরাধের কারন খোঁজা জরুরী। ফাঁসি, জেল হবে, পাশাপাশি দেশে কেন এত ধর্ষণ বেড়ে গেছে তাও বের করতে হবে।
ধর্ষণের সাজা কি একেবারেই হয়না এদেশে ? হয়, তবে খুব কম। ধর্ষণ রিপোর্টই হয় খুব কম। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক মান-সম্মান নামক একটা ফালতু বিষয় আছে এখানে যা আইনের শাসনের বড় একটা শত্রু। যাদের সাজা হয়েছে, তারা আসলে ‘জেনারেলিস্ট’। যারা অপরাধ করেও পার পেয়ে গিয়েছে, তারা এ বিষয়ে ‘স্পেশালিস্ট’ । আমাদের সমাজে এই স্পেশালিস্ট এর সংখ্যাই বেশী। যে দু-একটা আমরা জানি সেগুলো ঐ জেনারেলিস্ট ক্যাটাগরির। সিলেটের এম সি কলেজে কি এর আগে ধর্ষণ হয়নি ? কলেজের টিলার আশাপাশে খোঁজ নিয়ে দেখুন। এখন বিষয়টি এতো সমালোচিত হয়েছে কারন ভিক্টিম ছিল বিবাহিত। যদি এমন হতো, দুইজন প্রেমিক-প্রেমিকা বিয়ের আগেই ঐ কলেজের কোন নির্জন স্থানে গল্প করছে, একটু ঘনিষ্ট হয়েছে – এটা দেখে কোন নেতা এগিয়ে গিয়ে তাদের শাস্তি দিল, মোবাইল কেড়ে নিলো বা মেয়েটিকে ধর্ষণ করলো – এমন কিছু ঘটলে কেউ জানবেও না হয়তো এবং জানলেও আজ এই যে কোটি মানুষ ধর্ষিতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে তারাও মিন মিন করে সেই ধর্ষণের জন্য মেয়েটিকে দায়ী করতো। একজন প্রেমিকা, একজন অভিনেত্রী, কোন থিয়েটার কর্মী, একজন পতিতা বা তাদের ভাষায় রাস্তার মেয়ে/বাজারী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সারাদেশ তো দূরে থাক সেই এলাকার মানুষেরও কোন শব্দ থাকতো না। তাহলে কি দাঁড়ালো ? এই সমাজটাই ধর্ষণের সহায়ক। তাদের প্রতিবাদের ভাষাও আলাদা হয় ভিন্ন ভিন্ন মেয়ের ক্ষেত্রে যেটা হওয়ার কথা ছিল এক ও একক।
ছেলে সন্তানের পিতামাতা হয়ে ভাবতে যাবেন না বেঁচে গেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার ছেলে সন্তানটিও রেহাই পায়নি। বিশেষ করে মাদ্রাসা, মক্তবে হাজার হাজার ছেলে শিশু প্রতিনিয়ত তাদের কিছু শিক্ষক ও সিনিয়রদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। মেয়ের পিতা মাতা হয়ে ভাববার কারণ নেই মেয়ে জন্ম দিয়ে ফেঁসে গেছেন, আপনি/আপনারা না, পুরো দেশটাই ফেঁসে গেছে, ধর্ষিত হচ্ছে ছেলেরাও। ধর্ষক আমরাই তৈরী করেছি এ কথা অস্বীকার করলেও লাভ নাই। ধর্ষক আমরা পালি, লালন করি, বাঁচাই। লাভ নাই বিচার চেয়ে যদি রাষ্ট্র চুপ থাকে। হয় লড়ুন নয় মরুন। আত্মরক্ষার জন্য যাই ইচ্ছা করতে পারেন কিন্তু সে লড়া সাময়িক। শুধু মারামারির লড়া, লড়া নয়। সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেয়া একটা বড় লড়াই। সন্তানকে শেখান মানবতাবাদ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা, অন্য কিছু নয়। সামাজিক ট্যাবুগুলো ভেঙ্গে ফেলুন, সন্তান যেনো তার উপর ঘটে যাওয়া কোন অন্যায় আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। খোঁজ রাখুন সন্তানের। ভয় নয় – ভালোবাসা দেখান, দূরে ঠেলে নয় – পাশে দাঁড়ান। এ লড়াই সময়ের লড়াই। সমাজ ও রাষ্ট্র আপাতত কিছু করবে বলে মনে হয়না, নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য নিজেদেরকেই এখন লড়তে হবে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণাঃ
https://cyber.harvard.edu/vaw00/theories_of_rape.html
Related Posts

How much longer will the Muslim extremists in Bangladesh continue to oppress Hindus?
Ever since I became aware of the world around me in Bangladesh, I’ve witnessed violenceRead More

বাংলাদেশের মুসলিম উগ্রবাদীরা হিন্দুদের উপর আর কতো অত্যাচার চালাবে?
বুদ্ধি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি, ইসলাম ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের নবীকে অবমাননারRead More

The Uncertain Lives of Freethinkers in Bangladesh: Fundamentalist Persecution of Atheist and Secular Bloggers
Over the past decade, freedom of expression in Bangladesh has been severely restricted, especially forRead More
Comments are Closed