Politics
No More Student Politics

No More Student Politics !

বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্ররাজনীতিকে না বলুন, এটা দিয়ে দেশ ও মানুষের কোন লাভ নেই

সাবেকুন নাহার সানি। ২০০২ সালের ০৮ জুন টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের (৯৯ ব্যাচ) লেভেল ২, টার্ম ২ এর মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। প্রায় দুই যুগ পরেও ছাত্রদলের সেই সন্ত্রাসীদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। আপিল বিভাগ মুল আসামী মুকিত, টগরের মৃত্যুদন্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন দেন। যাদের মৃত্যুদন্ড হয় তাদের মধ্য নুরুসহ দুজন এখনো পলাতক।

৯ এপ্রিল ২০১৩, জঙ্গিদের চাপাতির কোপে নিহত বুয়েটের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপের বিচার হয়নি আজও। অভিযুক্ত হেফাজত কর্মী স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেজবাহ উদ্দিন জামিন পেয়ে এখন ফেরারি।

দুই বছর আগে শিবির সন্দেহে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আবরার ফাহাদকে। হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। মামলার প্রাথমিক রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, পাঁচজনের যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। ধারনা করা হয় উচ্চ আদালতে এই রায় পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কয়জনের সাজা কতটুকু টিকে থাকবে সেটা আমরা এখন বলতে পারি না। নিহত আবরার ও শাস্তি পাওয়া সন্ত্রাসী ছাত্ররা সবাই কিন্তু মেধাবী, তারা দেশ ও মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ ছিল। তাদের ঘিরে স্বপ্ন বুনতো তাদের পরিবার। তারাও এক সময় স্বপ্ন দেখতো দেশ ও বিশ্বের উন্নতির জন্য, মানব সভ্যতায় নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে। কোন সে অপশক্তি যা একজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ও অন্যদের খুনি-সন্ত্রাসী বানিয়ে এই মেধাগুলোকে শেষ করে দিলো ?

মৃত্যুদন্ড দিলেই কি এই সমস্ত অপরাধ কমে যাবে ? এটা কোথাও প্রমানিত হয়নি যে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনে। ধর্ষণ, মাদক পচারেরর শাস্তি মৃত্যূদন্ড করা হলেও ধর্ষণ, ইয়াবা ও অন্য মাদকের প্রসার কমেছে ? অপরাধের মূলে যদি হাত না দেন, শিকড়কে যদি উপড়ে না ফেলেন তবে অপরাধ কমবে না। ছাত্ররাজনীতি এখন তেমনই এক অপরাধের শিকড়ে পরিনত হয়েছে।

একটা সময় আমরা ছিলাম পরাধীন। বাংলাদেশে শিক্ষিত, সচেতন মানুষ কম ছিল। সবাই তথ্যও নিয়মিত পেত না। দেখা যেতো ঢাকায় কিছু ঘটলে দূরের রংপুরের একজন গ্রামের মানুষ সেটা জানতে পারতো ১০ দিন পরে। তখন ছাত্ররাই ছিল সবচেয়ে প্রগতিশীল, সচেতন। ছাত্ররা রাজনীতি না করলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আদৌ হতো কিনা, বা হলেও ঐ সময়ে হতো কিনা সেটা সন্দেহ। ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন সে সময়ে ছিল। ছাত্র রাজনীতিও সে সময়ে দেশের প্রয়োজনে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে।

এখন বাংলাদেশ স্বাধীন, কিন্তু ছাত্র রাজনীতি তার পথ হারিয়েছে অনেকদিন আগে। এখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন, জখম, জমি দখল, হল দখল, আধিপত্ত বিস্তার, সন্ত্রাস নিয়েই এখন তাদের অধিকাংশ সংবাদ প্রকাশ হয়। গত দুই/তিন দশকে ছাত্র রাজনীতির কোন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অর্জন আপনি দেখাতে পারবেন না। সবখানে নেতিবাচক অর্জন।

আগে দেখতাম, এইচ এস সি পর্যন্ত সচরাচর সাইন্সের ও অন্য বিভাগের মেধাবী ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতি করতো না। ঠিক তারাই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল প্রতিযোগীতাপূর্ণ পরীক্ষায় অবতীর্ন হয়ে মেধার যোগ্যতা প্রমান করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। ভর্তি হয়ে তারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করে বা করতে বাধ্য হয়।

আমি যে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেটা বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কোন ছাত্ররাজনীতি নেই। তবে ভর্তির আগে পরে অন্য আরো ২/৩ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার, থাকার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখতাম প্রথম বর্ষের ছাত্রদের কিভাবে বাধ্য করা হয় মিছিলে যেতে, মারামারিতে অংশ নিতে। খুব কম সংখ্যক ছাত্রই স্বেচ্ছায় ছাত্ররাজনীতিতে জড়ায়। একপর্যায়ে মাদক, ক্ষমতা প্রভৃতির মোহে আকৃষ্ট হয়ে একসময়ের অনিচ্ছার জিনিস পেশায় পরিনত হয়।

কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের দুই বড় রাজনীতিকের পক্ষের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাথার খুলি হারায় এক মেডিক্যাল ছাত্র। কতটা নিকৃষ্ট মনোবৃত্তি এই ছাত্রদের মনে জন্মালে তারা তাদের পবিত্র দায়িত্ব শিক্ষাগ্রহন বাদ রেখে অন্য রাজনীতিকের স্বার্থ, আধিপত্য রক্ষার জন্য নিজেরা মারামারি করে জীবন হাতে নেয়, অন্যের জীবন নেয়।

কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল কোন উদাহরন তোরি না হলে, সেখান থেকে একের পর এক খারাপ কাজের নজির সৃষ্টি হলে সেটা সেই প্রতিষ্ঠানেরই ব্যর্থতা। সেজন্য একমাত্র সমাধান হলো সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া। ক্যান্সার/টিউমার হলে সেই ক্ষতিগ্রস্থ কোষকে কেটে ফেলাই চুড়ান্ত সমাধান। সেই সময় এখন সবার সামনে। বিশেষ করে জাতীয় রাজনীতিকদের সামনে। দয়া করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিন। এই জিনিসের ভাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ছাত্ররাজনীতি না থাকলেও ছাত্ররা তাদের ও দেশের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে পারে, তার উদাহরন আছে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’। প্রয়োজনে রিসার্চ করে দেখুন, খুবি’র ছাত্ররা কি সচেতন না ? তারা দেশের জন্য কাজ করছে না ?

বাংলাদেশ এখন স্বাধীন, দয়া করে পঁচে যাওয়া ছাত্ররাজনীতির শিকড় উপড়ে ফেলুন। বিকল্প হিসাবে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চায়, বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় তাদেরকে উৎসাহিত করুন। একেবারে ভ্যাকিউম তৈরি করলে আবার জঙ্গি ও মৌলবাদীরা সুযোগ নিয়ে ব্রেইনওয়াশ করবে। সুতরাং অবশ্যই সুস্থ বাঙালি সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে হবে প্রতিটা ক্যাম্পাসে। তারা এমনিতেই দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে সচেতন থাকবে। আর কত ছাত্রের স্বপ্ন ধ্বংস হবে ? আর কত মা-বাবার আশা শেষ হয়ে যাবে আপনাদের স্বার্থের কারনে ? আর কত প্রাণ নিবেন আপনারা ? অপরাধের শিকড়ে হাত দিন, শিকড়কে উপড়ে ফেলুন। দেশের মূল্যবান সম্পদ, মেধাগুলোকে এভাবে পঁচতে দিবেন না। শুধুমাত্র শাস্তি প্রদান কোন সমাধান নিয়ে আসবে না, মূলে হাত দিন।

রাজনীতিবদের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার এই ছাত্র রাজনীতি। সুতরাং তারা কিছু করবে এই আশা ক্ষীন। এজন্য অভিভাবকদের হতে হবে তুমুল সচেতন। নিজের ছেলে-মেয়েরা যেনো এই ছাত্ররাজনীতি নামক বিষবৃক্ষের সংস্পর্ষে কোনভাবে না যেতে পারে সেজন্য সার্বক্ষনিক নজরদারি করতে হবে। ‘আই হেইট পলিটিক্স’ প্রজন্মকেও তাদের এই কমিটমেন্টে অটল থাকতে হবে যেনো ছাত্র অবস্থায় কোনভাবেই এই বিষবৃক্ষের ছায়া তাদের অভিশপ্ত না করে। সাধারন মানুষকেও জনমত তৈরি করে সমাজের শিশু, তরুণ, যুবকদের এই বিষ থেকে নিবৃত্ত রাখতে হবে।

Related Posts

attacks over blasphemy claim in Bangladesh

How much longer will the Muslim extremists in Bangladesh continue to oppress Hindus?

Ever since I became aware of the world around me in Bangladesh, I’ve witnessed violenceRead More

vandalism against minority Hindus by Islamic extremists

বাংলাদেশের মুসলিম উগ্রবাদীরা হিন্দুদের উপর আর কতো অত্যাচার চালাবে?

বুদ্ধি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি, ইসলাম ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের নবীকে অবমাননারRead More

Religious Fanaticism Examples

এই ধর্মীয় উন্মাদনা এখনি থামাতে হবে, সভ্যতার পথে হাঁটুন

বাংলাদেশের সমাজটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে বিগত ২০/৩০ বছরে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে জঘন্য অনুঘটক ছিলRead More

Comments are Closed