
Mitochondrial Eve!
নারীকে সুরক্ষা দেয়াটা পুরুষের কর্তব্য, এটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা
সব সমাজের একটা কমন টেন্ডেন্সি হলো নারীকে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এটা প্রকৃতির একটা নিয়ম।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ নামে একটি জনপ্রিয় বিষয় আছে বিজ্ঞান জগতে। মাইটোকন্ড্রিয়াল ইভ হলো একটি ধারণা যা জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আজকের জীবিত সব মানুষের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (যা শুধুমাত্র মায়ের মাধ্যমে সন্তানের মধ্যে যায়) একসময় একটি নির্দিষ্ট নারীর কাছ থেকে এসেছে, যিনি প্রায় ১,৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ বছর আগে আফ্রিকায় বসবাস করতেন। তবে, এটি অর্থাৎ সব মানুষ সেই নারীর সন্তান – এমন নয়। বরং, তার মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-র লাইনটি টিকে আছে, অন্য নারীদের লাইন হারিয়ে গেছে।
জীবের একটা বা বলতে পারেন প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সে তার প্রতিরূপ দুনিয়ায় রেখে যেতে চায়। এজন্য সন্তান উৎপাদন ও তার যত্ন নেয়াটা জীবের কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ন। অনেক প্রাণী, বিশেষ করে তাদের মায়েরা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন বা রক্ষা করেন। মানুষ তার অবচেতন মনেও এটা মেনে নেয়, দুনিয়ায় তার জীবন শেষ মানে তার অনুভূতি, আবেগ, চেতনার শেষ। ধর্ম যতোই পরকালের লোভ দেখাক মানুষ তার অবচেতন মনে দুনিয়ায় তার উত্তরাধিকার রেখে গিয়ে তার অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। আর এই জীবের ধারাবাহিকতা রক্ষা নারী ছাড়া সম্ভব না।
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান আমাদের বলছে, একজন পুরুষের মৃত্যু হলে গোটা প্রজাতি টিকে যায় কিন্তু একজন নারীর মৃত্যু হলে জেনারেশন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কেন? পুরুষের মৃত্যু কি নারীর মৃত্যুর চেয়ে সস্তা? দেখুন, প্রতি বছর একজন পুরুষ এক হাজার নারীর সাথে সেক্স করলে, থিওরিটিক্যালি এক হাজার সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। কিন্তু একজন নারী এক হাজার পুরুষের সাথে সেক্স করলে একটি মাত্র সন্তান জন্ম দেয়। আর তাই নারীর মৃত্যু পুরুষের মৃত্যু থেকে সবসময় বিপজ্জনক। সমাজে নারীর পরিমাণ কমে গেলে পুরুষ তার শুক্রাণু দিয়ে কি করবে? সন্তান গর্ভধারণের জন্য যদি পর্যাপ্ত নারীই না থাকে, তাহলে পুরুষের ডিএনএ কি কাজে লাগবে? একটা পুরুষ চাইলে এক বছরে এক হাজার সন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে কিন্তু একজন নারী যদি এক বছর পর মারা যায়, তার সন্তান হবে মাত্র একটি আর সেই সন্তানও মায়ের অভাবে কোনো একসময় শেষ হয়ে যেতে পারে।
যখন কোন ভাষা ছিল না, তখন থেকেই পুরুষ এটা জানে। সেজন্য সে নারীকে সবসময় সুরক্ষা দিয়ে রাখে। নারীর গায়ে হাত তোলাকে আলাদা করে অন্যায় ভাবে, নারীকে অসম্মান করাকে বেশী করে দেখে। সেজন্য সমাজে একজন নারীর শরীরে হাত তোলা একজন পুরুষের শরীরে হাত তোলার চেয়ে অধিক সেনসেটিভ। এটাকে বলা হয় “Maternal Investment Safeguard Hypothesis”।
নারীরা গর্ভধারণ ও সন্তান পালন করেন, যা একটি জৈবিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। এজন্য প্রাচীন সমাজগুলোতে নারীর সুরক্ষা ছিল একটি প্রাকৃতিক প্রবণতা, যাতে প্রজাতির টিকে থাকা নিশ্চিত হয়। Parent Investment Theory অনুসারে, যেহেতু নারীরা সন্তান জন্ম দিতে বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করেন, পুরুষদের মধ্যে এমন আচরণ বিকশিত হয়েছে যা নারীর সুরক্ষা ও সহায়তায় উৎসাহিত করে।
সেজন্য সকল সুপুরুষ নারীর প্রতি যত্নবান থাকেন। প্রত্যেক সমাজেই তাদের জন্য আলাদা সম্মান ও সুরক্ষা দেয়া হয়। বলতে পারেন, নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দেয়া হয় না। কিন্তু সেটা সমাজের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ফলানোর সময়। সেখানে নারীর পূর্ণ মর্যাদা প্রাপ্য। কিন্তু সার্বিকভাবে সমাজে নারীকে যে আলাদাভাবে দেখা হয় তার ভুরি ভুরি প্রমান সবখানে পাবেন। নারীর গায়ে হাত তোলা মহা অন্যায়, নারীকে আসন ছেড়ে দেয়া, নারীকে অধিক পরিশ্রমের কাজ করতে না দেয়া এসব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা। নারী ছাড়া মানব প্রজাতি টিকে থাকবে না।
Related Posts

Sunlight: A Natural Medicine, Cultural Wisdom, and the Key to Healthy Longevity
For thousands of years, many civilizations have worshipped the sun as a deity – notRead More

সূর্যের আলো: প্রাকৃতিক ঔষধ, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি
হাজার হাজার বছর ধরে অনেক সভ্যতা সূর্যকে দেবতা মানে; শুধু বৈদিক, পৌরাণিক, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,Read More

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology
A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More
Comments are Closed