
Let the silence of victims end!
আমাদের এই পৃথিবী হোক নারীদের জন্য নিরাপদ, হোক ধর্ষক মুক্ত
Let the silence of victims end. Let the violence never begin.
নির্ভয়ার ঘটনার পর ধর্ষণ নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা শুধু একটি অপরাধের বিচার নয় – এটি ছিল একটি জাতির আত্মজিজ্ঞাসা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের দিল্লিতে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ গণধর্ষণ কেবল একজন নারীর ওপর বর্বরতা ছিল না, বরং তা উন্মোচন করেছিল সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিকৃত মানসিকতা, আইনের দুর্বলতা, এবং সাংস্কৃতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের দীর্ঘস্থায়ী ছায়া।
ধর্ষণ কি আকস্মিক ভুল, নাকি পরিকল্পিত বিকৃতি?
অনেকেই ভেবেছিলেন, ধর্ষণকারীরা হয়তো হঠাৎ কোনো ভুল করে ফেলেছে, এবং সময়ের সাথে তারা অনুতপ্ত হবে। কিন্তু যখন নির্ভয়ার ধর্ষকদের মনোভাব বিশ্লেষণ করা হয়, তখন দেখা যায় তারা নিজেদের অপরাধকে অপরাধই মনে করে না। বরং তারা বলেছে, সুযোগ পেলে আবারও একই কাজ করবে। তাদের যুক্তি ছিল, রাতের বেলা নারীরা বাইরে বের হলে বা পশ্চিমা পোশাক পরলে, তাদের ধর্ষণ করা অন্যায় নয়। এই মনোভাব শুধু বিকৃত নয়, তা সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, ব্যক্তিগত নয়
এই ধরনের অপরাধগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ধর্ষণ কেবল ব্যক্তিগত বিকৃতির ফল নয়। এটি একটি সমাজব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী ব্যর্থতার প্রতিফলন। যেখানে আইনের শাসন দুর্বল, বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘ, এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয় না, সেখানে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। উন্নত দেশগুলো যেখানে অপরাধীদের পুনর্বাসন ও মানসিক পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে শুধু নতুন আদালত ভবন তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, অপরাধ বাড়ছে, কিন্তু তার মূল কারণগুলো দূর করার চেষ্টা হচ্ছে না।
শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব
ধর্ষণকারীদের মানসিকতা গড়ে ওঠে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক ও পারিবারিক পরিপ্রেক্ষিতে। যদি পরিবারে নারীর প্রতি সম্মান শেখানো না হয়, যদি স্কুলে লিঙ্গ সমতা নিয়ে আলোচনা না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সেই শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নেবে না। আমাদের সমাজে এখনো নারীর স্বাধীনতা, পোশাক, চলাফেরা নিয়ে ট্যাবু রয়েছে। এই ট্যাবু ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে পরিবার, স্কুল, এবং গণমাধ্যম থেকে।
সাংস্কৃতিক অবকাঠামো ও বিনোদনের বিকৃতি
বর্তমানে তরুণদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টিকটক ও ফেসবুক। যেখানে প্রতিভা বিকাশের বদলে ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। বই পড়া, বিতর্ক, সাহিত্যচর্চা, বা সৃজনশীল কার্যকলাপের জায়গা দখল করে নিচ্ছে অশ্লীলতা ও অগভীর কনটেন্ট। এই সাংস্কৃতিক অবক্ষয় তরুণদের চিন্তা ও মূল্যবোধকে প্রভাবিত করছে, যা ধর্ষণসহ নানা অপরাধে ভূমিকা রাখছে।
নৈতিকতা ও রাজনীতির সম্পর্ক
নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা শুরু হয় পরিবার থেকে, কিন্তু তা বিস্তৃত হয় রাজনীতির মাধ্যমে। যদি রাজনীতি শুধু ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা সমাজে মানবিকতা ও ন্যায়ের পরিবর্তে স্বার্থপরতা ও দমননীতিকে উৎসাহিত করে। তরুণ প্রজন্ম যদি বই না পড়ে, ইতিহাস না জানে, তাহলে তারা রাজনীতিকে বুঝবে কীভাবে? তখন রাজনীতি হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতা দখলের খেলা, নেতৃত্বের আদর্শ নয়।
ধর্ষণ: একটি জাতির দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি
আমরা যদি ধর্ষণকে শুধু একটি অপরাধ হিসেবে দেখি, তাহলে তার সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটি একটি দীর্ঘ সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং নৈতিক অবক্ষয়ের ফল। এটি একটি টিউমার নয়, এটি এখন ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। এর প্রতিকার শুধু আইন দিয়ে সম্ভব নয়, দরকার একটি সামগ্রিক পরিবর্তন – শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবার, রাজনীতি, এবং গণচেতনার প্রতিটি স্তরে।
[Pic: Wikimedia, CC]
Related Posts

How much longer will the Muslim extremists in Bangladesh continue to oppress Hindus?
Ever since I became aware of the world around me in Bangladesh, I’ve witnessed violenceRead More

বাংলাদেশের মুসলিম উগ্রবাদীরা হিন্দুদের উপর আর কতো অত্যাচার চালাবে?
বুদ্ধি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি, ইসলাম ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের নবীকে অবমাননারRead More

The Uncertain Lives of Freethinkers in Bangladesh: Fundamentalist Persecution of Atheist and Secular Bloggers
Over the past decade, freedom of expression in Bangladesh has been severely restricted, especially forRead More
Comments are Closed