
Is evolution scientifically proven ?
বিবর্তনবাদ কি শুধুই একটি মতবাদ ? এটা কি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত নয় ?
বিবর্তনবাদ কি শুধুই একটি মতবাদ ? এটা কি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত নয় ?
না, বিবর্তনবাদ শুধুমাত্র একটি “মতবাদ” নয় – এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব।
🧬 বিবর্তনবাদ: মতবাদ নয়, প্রমাণিত বিজ্ঞান
“তত্ত্ব” (Theory) শব্দটি অনেকেই ভুলভাবে “অনুমান” বা “অবিশ্বাসযোগ্য ধারণা” হিসেবে বোঝেন। কিন্তু বিজ্ঞানে “তত্ত্ব” মানে হলো:
✅ বহুবার পরীক্ষিত ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক ব্যাখ্যা
✅ বাস্তব তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে গঠিত
✅ ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা রাখে
🔍 বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
- বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে:
- জিনতত্ত্ব (Genetics): মানুষের DNA শিম্পাঞ্জি, বনোবো, ওরাংওটাং-এর সাথে ৯৮% এর বেশি মিলে যায়
- ফসিল রেকর্ড (Fossil Record): বিভিন্ন যুগের জীবাশ্মে ধাপে ধাপে পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়
- প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural Selection): পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার জন্য জীবের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়
- প্রাণীর শারীরিক গঠন ও অঙ্গসংস্থান: বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে অভিন্ন অঙ্গের উপস্থিতি (যেমন—হাত, পাখনা, ডানা) বিবর্তনের ধারাবাহিকতা দেখায়
🧠 কেন “মতবাদ” বলে বিভ্রান্তি হয়?
ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বা বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে অনেকে বিবর্তনবাদকে “মতবাদ” বলে ছোট করতে চান। কিন্তু:
📚 বিজ্ঞানীরা কী বলেন?
- Theodosius Dobzhansky: “Nothing in biology makes sense except in the light of evolution.”
- Richard Dawkins, Stephen Jay Gould, Charles Darwin – সবাই বিবর্তনকে জীবজগতের পরিবর্তনের মূল ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন
একটা সত্য ঘটনা বলি। পশ্চিমবঙ্গের এক কাপল ইউটিউবে বাংলা বিভিন্ন কন্টেন্টের রিভিউ দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা দেখেন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে বাংলাভাষী বেশী। তখন তারা বাংলাদেশের নাটক, সিনেমার রিভিউ দেয়া শুরু করেন। তাদের সাবস্ক্রাইবার, দর্শক বাড়তে থাকলো হু হু করে। এরপর তারা দেখলো অধিকাংশ দর্শক কমেন্ট করে ওয়াজের বক্তাদের রিভিউ করতে বলছেন, তারা সেটা শুরু করলেন, দেখলেন এবার সাবস্ক্রাইবার ও দর্শক বাড়ছে টর্নেডোর গতিতে। এখন তারা সব বাদ দিয়ে শুধু ওয়াজের রিভিউ দেন। তারা ভাল করেই বুঝে গেছেন মানুষের মাথায় গেঁথে থাকা জিনিসকে তাদের মতো করে তুলে ধরতে পারলে মানুষ তা খাবে। এদেশে জনপ্রিয় হওয়া খুব সহজ, মানুষের মাথায় গেঁথে যাওয়া ধারনাকে নিয়ে কুযুক্তি দিলেও জনপ্রিয় হওয়া যায়। অনেক রাজনীতিবিদ যা বলেন তা করেন না, কিন্তু বলেন কেন ? মানুষ খুশি হয় বলে। অনেকে জনৈক আরিফ আজাদের লেখা ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ বই পড়ে মনে করেন আহ, এবার বিজ্ঞানের বিভিন্ন মতবাদ, ফ্যাক্টকে একহাত নেয়া যাবে! আপনি যদি ‘লজিক্যাল ফ্যালাসি’ সম্পর্কে জানেন ও নিজস্ব চিন্তার বাইরে এসে নিরপেক্ষভাবে বিজ্ঞান পড়েন তবে বুঝবেন এই সমস্ত বই স্রেফ গার্বেজ। উনি যে যুক্তি বা কুযুক্তি দিয়েছেন তা উনার আগেও অনেকে দিয়েছেন। উনি শুধু সেইগুলোকে একত্রে করে গল্পের রুপ দিয়েছেন, এই যা। এই বইয়ের সমালোচনা অনেক আগেই বিজ্ঞান লেখকেরা শেষ করে রেখেছেন, একটা লিংক দিলাম, পড়ে দেখবেন।
https://bigganjatra.org/debunking-arif-azad/
বিবর্তনবাদ কি শুধুই একটি মতবাদ ? এটা কি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত নয় ?
বিবর্তনবাদ ফ্যাক্ট, এটা বৃহত্তর সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয় নয়। সূর্য প্রতিদিন পূর্বদিকে ওঠে, এটা একটা ফ্যাক্ট, একে ল্যাবরেটরিতে প্রমান করার কি আছে ? বিজ্ঞানের যে সমস্ত বিষয় মোটামুটি সুপ্রতিষ্ঠিত, বিবর্তনবাদ তাদের একটি। আপনারা যারা বলেন বিবির্তনবাদ একটি থিউরি, প্রমানিত নয় – ধারনার সমর্থনে কোন পিয়ার রিভিউড জার্নালের রেফারেন্স দিতে পারবেন ? অথবা কোন স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বা নাম করা ইউনিভার্সিটির? কোন অনলাইন/অফলাইন সংবাদপত্রের আর্টিকেল, ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও, এমনকি উইকিপিডিয়াও সায়েন্টিফিক রেফারেন্স নয়। কে বলেছে বিবর্তনবাদ শুধুই একটি মতবাদ যা বিজ্ঞানে প্রমানিত নয়? বিবর্তনবাদ হাইপোথিসিস, থিওরির স্টেজ পার করে এসে এখন ফ্যাক্ট, কনফার্মড ফ্যাক্ট। এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে পৃথিবী ফ্ল্যাট, সুর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে, চাঁদে মানুষ যায়নি। তাদের বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের ফ্যাক্ট কি এক হবে ? বিবর্তনবাদকে হাজার হাজার চাক্ষুস এভিডেন্স ও ফসিল বিশ্লেষণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, এটা একটা ন্যাচারাল প্রসেস, সায়েন্টিফিক টুল তো নয়, একে সায়েন্টিফিক ফ্রেমওয়ার্কে ফেলে ল্যাবরেটরিতে প্রমান করার তো দরকার নেই। এরপরেও ডারউইনের একটা থিওরি সায়েন্টিফিক্যালি প্রমান করা হয়েছে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজের একটা আর্টিকেলও আছে দেখলাম এ ব্যাপারে। বিবর্তন/মিউটেশান যে ঘটে তা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও টেকনিওন ল্যাব তাদের ল্যাবরেটরিতে প্রমান করেও দেখিয়েছে। তবে বিবর্তনবাদ ডারউইনেরও আগে আলোচিত, উনি জ্ঞানটিকে একত্র করে সন্নিবেশিত করেছেন।
আমাদের মতো দেশের কিছু মানুষ ছাড়া অন্যদেশের বিজ্ঞান জানা মানুষের মধ্যে বিবর্তনবাদ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একটা উদাহরন দেই, নীচের লিংকটা কোরার একটা প্রশ্ন-উত্তর। এখানে দেখেন কেউ বিবর্তনবাদ কে ভুল বলে কোন প্রশ্ন তোলেননি, একজনও না। তার মানে কি দাঁড়ালো? বিবর্তনবাদ এখন বিজ্ঞান কমিউনিটিতে প্রশ্নহীন বিষয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ সবখানে জীবের বিকাশ ও প্রজাতির উদ্ভবের জন্য এই বিবর্তন তত্ত্বকে পড়ানো হয়। এই লিংক কোন রেফারেন্স নয় তবে আলোচনাটা প্রাঞ্জল ও সেখানে অনেক রেফারেন্সের লিংক আছে।
https://quora.com/Is-evolution-scientifically-proven
এই যে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মিউটেশান, নতুন স্ট্রেইনের উদ্ভব; সেজন্য নতুন এন্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন লাগে এগুলো বিবর্তনের চাক্ষুস প্রমান। উন্নত প্রজাতির ফসল উদ্ভাবন, শুকরের কিডনি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের গবেষণা, ইঁদুরের উপর মানুষের ওষুধের প্রথম পরীক্ষা সবই এই বিবর্তন ধারনার প্রমান। মিউটেশান বিবর্তনের প্রধানতম এজেন্ট।
গবেষণায় দেখা গেছে সুন্দরবনের বাঘ ক্রমেই ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে। কারন সুন্দরবনে খাবারের পরিমান কম। বাঘের কিন্তু অলরেডি অনেক প্রজাতি আছে; বেঙ্গল টাইগার, কাস্পিয়ান টাইগার (বিপুপ্ত), আমুর টাইগার, জাভা টাইগার, ইন্দো-চায়না টাইগার … আরো আছে। আফ্রিকান হাতির পুরুষ, স্ত্রী সবার দাঁত (গজদন্ত) আছে, এশিয়ান হাতির শুধু পুরুষের আছে। দেখা যাবে লক্ষাধিক বছর পরে যদি এই হাতির বংশ থাকে তবে তাদের দুই প্রজাতির চেহারা, আকৃতি ভিন্ন হয়ে নতুন নতুন প্রানীর রুপ নিবে।
খাবার গ্রহনের ইচ্ছা থেকে কোন প্রানীর গলা লম্বা হয়ে যাওয়া বা জলজ প্রানীর উড়তে চাওয়া থেকে পাখি – বিবর্তনের বিষয়গুলো এমন না। মিউটেশান প্রক্রিয়ায় শরীরের পরিবর্তনের ফলে যে প্রাণীগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকে তাদের ডিএনএ’ই পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে। যেমন হোয়াইট লায়নের সাভানার সোনালী ঘাসের রাজত্বে ক্যামোফ্লাজ করে শিকার ধরা কঠিন বলে হোয়াইট লায়নের পরিমান বাড়েনি, হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ক্রগার ন্যাশনাল পার্কের হোয়াইট লায়ন ক্যাসপারের ঘটনাগুলো দেখলে বুঝবেন ব্যাপারটা। থিংক বাংলা চ্যানেলে বিবর্তনের কিছু চমৎকার ভিডিও আছে। দেখতে পারেনঃ
https://youtube.com/c/ThinkBangla/videos
এই ভিডিওগুলো যারা বানান ও যারা সেখানে কথা বলেন তারা সবাই সফল সাইন্স স্কলার ও একাডেমিশিয়ান, ভিডিওগুলোকে পিওর বিজ্ঞানের কথা হিসাবে ধরে নিতে পারেন। বিজ্ঞানের কথা রেফারেন্স ছাড়া বলা যায় না। কেউ কিছু বলে দিলেই সেটাকে বিজ্ঞানের কথা বলে মেনে নিবেন না, যিনি বলছেন তার গ্রহনযোগ্যতা ও তার দেওয়া রেফারেন্স চেক করে নিতে হবে।
বিবর্তন সম্পর্কে আরও জানতে এই বইটা পড়ে ফেলতে পারেনঃ https://tinyurl.com/4e42sr5p
বিবর্তনবাদ কি শুধুই একটি মতবাদ ? এটা কি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত নয় ? আপনি যদি বড় কোন স্কলার বা বিজ্ঞানীকে এই প্রশ্ন করেন তারা স্রেফ আপনাকে এড়িয়ে যাবে; কারন এই যুগে, এত শত শত এভিডেন্স ও ব্যবহারিক প্রয়োগের পরেও যারা এই প্রশ্ন করবে তারা জানার জন্য প্রশ্ন করে না, অহেতুক প্রশ্ন করে যায় বিতর্কের জন্য। কারন এই প্রশ্ন গুগলে করলেই তারা উত্তর পেয়ে যাবে যদি তাদের সেই উত্তর পড়ে বোঝার সামর্থ্য থাকে।
Related Posts

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology
A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

নারীকে সুরক্ষা দেয়াটা পুরুষের কর্তব্য, এটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা
সব সমাজের একটা কমন টেন্ডেন্সি হলো নারীকে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এটা প্রকৃতির একটা নিয়ম। মাইটোকন্ড্রিয়ালRead More

Evolution through mutation: Nature’s perfect strategy
Evolution is the gradual process of change in the living world through which species adaptRead More
Comments are Closed