Twins
Not only Identical Twins

Identical Twins!

জিনতত্ত্ব, যমজ, এবং বিবর্তনের রহস্যঃ জিনের গল্পে আমরা সবাই আত্মীয়

একজন মানুষের সঙ্গে অন্যজনের পার্থক্য কতটুকু জানেন? মাত্র ০.১-০.২% !

মানবজীবনের সূচনা ঘটে এক সূক্ষ্ম জৈবিক মিলনের মাধ্যমে – নারীর একটি ডিম্বাণু পুরুষের একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি ভ্রণাণু গঠন করে। এই একক কোষটি বিভাজন ও পার্থক্যকরণের মাধ্যমে পরিণত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ মানবদেহে। কখনো কখনো এই প্রক্রিয়ায় যমজ সন্তানের জন্ম হয়, যা হতে পারে দুই ধরনের – সমরূপ (অবিকল) ও অসমরূপ। অসমরূপ যমজ তখনই হয় যখন দুটি পৃথক ডিম্বাণু দুটি পৃথক শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, ফলে তারা জিনগতভাবে আলাদা হলেও একই সময়ে জন্ম নেয়। অন্যদিকে, সমরূপ যমজ হয় একটি ডিম্বাণু ও একটি শুক্রাণুর মিলনে গঠিত ভ্রণাণু যখন বিভাজনের এক পর্যায়ে দুটি পৃথক ভ্রুণে রূপ নেয়। এরা একই জিনগত নির্দেশনা বহন করে, ফলে তাদের দৈহিক গঠন, বৈশিষ্ট্য ও লিঙ্গ অভিন্ন হয়। এই ধরনের যমজ পৃথিবীতে তুলনামূলকভাবে বিরল – প্রতি হাজারে প্রায় চারটি।

সমরূপ যমজ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো ব্যক্তির ফিনোটাইপ (দৈহিক বৈশিষ্ট্য) অন্য কারো সঙ্গে হুবহু মেলে না। তাহলে আমাদের জিনগত মিল কতটা? মানব জিনোম প্রকল্প থেকে জানা যায়, প্রতিটি মানুষের শরীরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডিএনএ বেস জোড়া থাকে। দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রায় ৬ মিলিয়ন বেস জোড়ায় পার্থক্য থাকে। সংখ্যাটি বড় মনে হলেও এটি মোট জিনোমের মাত্র ০.১-০.২% পার্থক্য – অর্থাৎ আমরা সবাই প্রায় ৯৯.৯% জিনগতভাবে একে অপরের সঙ্গে মিল রাখি।

এই মিল শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, আমাদের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গেও রয়েছে। ২০০৬ সালে Lawrence Berkeley National Laboratory-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২৫-৩০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ান্ডার্থালদের সঙ্গে আমাদের জিনগত মিল প্রায় ৯৯.৫%। জীবিত আত্মীয়দের মধ্যে শিম্পাঞ্জির সঙ্গে মিল ৯৮%, ওরাংওটাঙের সঙ্গে ৯৬.৫%, রেসাস বানরের সঙ্গে ৯২% এবং ইঁদুরের সঙ্গে প্রায় ৮৫%। অর্থাৎ কোনো প্রজাতি যত আগে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের জিনগত মিল তত কম।

জিনবিজ্ঞানে “জনগোষ্ঠী” বলতে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার মানুষকে বোঝানো হয় না। বরং এটি বোঝায় এমন একটি গোষ্ঠী যারা ভৌগোলিকভাবে বা জীবনচর্চার দিক থেকে অন্যদের থেকে পৃথক থাকে এবং তাদের মধ্যে প্রজনন বা জিনগত বিনিময় সীমিত হয়। যেমন, বাংলাদেশের পাহাড়ি আদিবাসী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে জীবনধারা ও বসবাসের পার্থক্যের কারণে সাধারণত বিবাহ বা প্রজনন সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। ফলে তাদের মধ্যে জিনগত বিনিময় কম হয়। যদিও তারা একই মানব প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, তাদের জিনভাণ্ডারে প্রচুর মিল রয়েছে, আবার কিছু পার্থক্যও আছে – যার ফলে দৈহিক বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতা দেখা যায়, যেমন চোখের গঠন, নাকের আকৃতি, ত্বকের রঙ ইত্যাদি।

একই প্রজাতির সব জীবের কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গঠন এক হলেও ডিএনএ অনুক্রমে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে। এই পার্থক্যগুলো মূলত জীবনচর্চা ও সামাজিক ব্যবস্থার কারণে তৈরি হয়, ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে নয়।

মানব কোষে ডিএনএ থাকে দুটি জায়গায় – নিউক্লিয়াসে ও মাইটোকন্ড্রিয়ায়। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নিউক্লিয়াসের ডিএনএ থেকে অনেক দিকেই আলাদা। এটি দশ গুণ বেশি হারে মিউটেশন ঘটায়, এর মেরামত ক্ষমতা দুর্বল, এবং এটি মায়ের মাধ্যমে উত্তরাধিকারসূত্রে চলে আসে, মেন্ডেলিয়ান নিয়ম অনুসরণ করে না। নিউক্লিয়াসে প্রায় ৩০ হাজার জিন থাকে, কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়ায় মাত্র ৩৭টি। এছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-তে হিস্টোন প্রোটিন ও ইনট্রন থাকে না, যা নিউক্লিয়াসে থাকে। যদিও উভয়ের গঠন-উপাদান এক, তাদের কার্যপ্রণালী ভিন্ন।

“র‌্যান্ডম” শব্দটি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, র‌্যান্ডম মানে উদ্দেশ্যহীনভাবে কিছু ঘটে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ধরুন, একটি লটারিতে অনেকেই টিকিট কিনেছে, শুধু ‘ক’ ব্যক্তি বাদে। বিজয়ী নির্বাচিত হবে র‌্যান্ডম পদ্ধতিতে। তাহলে কি ‘ক’ ব্যক্তি জিততে পারে? না, কারণ সে টিকিটই কেনেনি। র‌্যান্ডম মানে হলো, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সমান সম্ভাবনা থাকা। ঠিক তেমনি, জিনগত মিউটেশনও র‌্যান্ডম, কিন্তু সীমাহীন নয়। কেউ হঠাৎ পাখি বা মাছ হয়ে যাবে – এমন নয়। পরিবর্তন ঘটতে পারে, কিন্তু তা ডিএনএ অনুক্রমের সীমার মধ্যে এবং পূর্বাভাস দেওয়া যায় না।

এইভাবে, মানব জিনতত্ত্ব আমাদের শেখায় – আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, অথচ প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে অনন্যতা। আমাদের বিবর্তনীয় আত্মীয়রা, জীবিত ও বিলুপ্ত, আমাদের ইতিহাসের অংশ। আর র‌্যান্ডম পরিবর্তন, যদিও পূর্বপরিকল্পনাহীন, তবুও তা ঘটে নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে – এটাই জীবনের রহস্যময় সৌন্দর্য।

Related Posts

Sunlight and Human Body

Sunlight: A Natural Medicine, Cultural Wisdom, and the Key to Healthy Longevity

For thousands of years, many civilizations have worshipped the sun as a deity – notRead More

Sunlight and Vitamin-D

সূর্যের আলো: প্রাকৃতিক ঔষধ, সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি

হাজার হাজার বছর ধরে অনেক সভ্যতা সূর্যকে দেবতা মানে; শুধু বৈদিক, পৌরাণিক, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,Read More

Evolutionary Biology and Women

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology

A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

Comments are Closed