Human Civilization
প্রশ্ন করতে শিখুন, বিনা প্রশ্নে সব কিছুকে মেনে নেয়া মানে সেটা অন্ধ বিশ্বাস !
২৫-৩০ লক্ষ বছর আগে ৪ পেয়ে এ্যাপ থেকে মানুষে বিবর্তনের ধারায় ২ পায়ে দাঁড়ানোর পর্যায়ে মেয়েদেরকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে হলে কোমর হতে হবে চিকন, যা জন্ম নালীকে সরু করে দেয়। তারপর সেটা এমন সময়ে ঘটল যখন নবজাতক বাচ্চাদের মাথার আকার বড় থেকে আরও বড় হচ্ছিল। ফলে জন্মকালীন মৃত্যুর হার আশংকাজনক হারে বেড়ে গিয়েছিল। যেসব মহিলা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব করতে সমর্থ হয়েছে তারাই বেঁচে থাকল এবং আরো বাচ্চা নিতে সমর্থ হলো। সেইসব বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং মাথা পুরোপুরি বড় হয়ে ওঠেনি। বিবর্তনের ধারা এইসব সময়ের পূর্বে প্রসবকারীদের প্রাধান্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখল। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানব শিশু পরিপূর্ণ বিকশিত হওয়ার আগেই জন্মগ্রহণ করে। জন্মলাভ করার সময় বেশিরভাগ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করার যথেষ্ট সময় পায় না। একটি অশ্বশাবক জন্মের পর পরই দৌঁড়াতে পারে, একটি বিড়াল শাবক জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মাকে ছেড়ে নিজের মতো বাঁচতে থাকে। সে তুলনায় মানব শিশুরা খুবই অসহায়- বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা এবং শিক্ষার জন্য বড়দের কাছে অনেক বছর তাদেরকে নির্ভরশীল থাকতে হয়।
এই সত্যটি মানব জাতির সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। নিঃসঙ্গ মায়েরা তাদের এবং বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট খাবার যোগাড় করতে পারে না। বাচ্চাকে বড় করতে হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীদের সাহায্যের প্রয়োজন হয় সবসময়। একটি মানব শিশুকে বড় করতে একটি গোত্রের প্রয়োজন হয়। বিবর্তন তাদেরই সহায়তা করেছে যারা নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছে। আর তাছাড়া, মানুষ যেহেতু অপরিপক্ব অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তাই অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষকে অনেক সহজে প্রয়োজন মত শিখিয়ে নেওয়া যায় এবং সামাজিক প্রাণী হিসেবে গড়ে তোলা যায়। ইট, মাটির পাত্র, চুনাপাথর ইত্যাদি পোড়ানো বা শুকানোর জন্য ব্যবহৃত চুল্লি থেকে যেভাবে চীনামাটির পাত্র বের হয় ঠিক সেভাবে বেশির ভাগ স্তন্যপায়ীর জরায়ু থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে। এটা একটা পরিপক্ক এবং তৈরি অবস্থায় বের হয়ে আসে। এখন আপনি যদি এই চীনামাটির ফুলদানির আকারের কোন পরিবর্তন করতে চান তবে এটাতে হয় দাগ ফেলতে হবে না হয় ভাঙতে হবে। অন্যদিকে মানুষ বের হয়ে আসে মায়ের জরায়ু থেকে ঠিক যেমন কাঁচ বের হয়ে আসে চুল্লি থেকে প্রায় গলিত অবস্থায়। চুল্লি থেকে কাঁচ বের হবার সময় বেশ নমনীয় একটা অবস্থায় থাকে বলে বের করে আনার পরও এটাকে প্যাঁচানো বা লম্বা করা কিংবা যে রকম ইচ্ছা আকার দেয়া যায়। একই ঘটনা ঘটে মানব শিশুর ক্ষেত্রেও। জন্মের পর তাকে আপনি শিক্ষাদান করতে পারেন এবং সামাজিক রীতি নীতিতে গড়ে তুলতে পারেন।
আর এ জন্যই আজ আমরা একজন মানব শিশুকে চাইলেই খ্রিষ্টান কিংবা বৌদ্ধ, পুঁজিবাদী কিংবা সাম্যবাদী, যুদ্ধপ্রিয় বা শান্তিপ্রিয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। ৩০ লক্ষ বছর মানুষের হেঁটে চলার পথে গত মাত্র ৫০০০ বছর ধরে তারা শিখছে তার পরিবারের একটা নিজস্ব রীতি আছে, কি খাবে না না খাবে, কাকে পছন্দ করবে আর কাকে ঘৃনা করব, তার বিশ্বাসটাই যে সেরা, অন্যদেরটা মিথ্যা। মাথায় গেঁথে যাওয়া এই ধারনাগুলো মানুষ সহজে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। বেশীরভাগ মানুষ সত্য-মিথ্যা না জেনেই একদিন চিরিদিনের জন্য তার জীবনের অবসান ঘটান। মাত্র গুটিকয়েক মানুষ তার নিজ প্রচেষ্টায় জানতে পারে বিজ্ঞানের সত্য, বিবর্তনের ধারায় মানুষের বর্তমান অবস্থান। ঠিক তখন তার মানবিক হওয়ার জন্য কোন কিছুর প্রলোভন দরকার হয় না। মানুষ যে একে অপরকে সাহায্য না করে, অন্যকে শ্রদ্ধা না করে, অপরকে ভাল না বেসে পৃথিবীকে সুন্দর করতে পারবে না – এটার প্রকৃত উপলব্ধি মানুষের ঠিক তখনই হয়। অন্য যারা ভাল কাজ করে তাদের সামনে কোন মূলা থাকে যেটির লোভে তারা ভাল কাজ করে। এজন্য বেশী বেশী পড়তে হবে, সব ধরনের বই, লেখা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। জানার এই প্রচেষ্টাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা করবে, তবুও প্রশ্ন করতে হবে। অন্যকে না করতে পারলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। আমাদের সমাজটা এমন হয়েছে – এখানে প্রশ্ন করাটাও বড় রিস্কের বিষয়।
Related Posts
What can be the problem if someone takes blood from his family member?
This is a frequently asked and very important question about blood donation. If you wantRead More
কেউ তার পরিবারের সদস্য থেকে রক্ত নিলে কি সমস্যা হতে পারে?
ব্লাড ডোনেশন সম্পর্কে এটা বহুল জিজ্ঞাসিত ও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন। ছোট করে উত্তর শুনতেRead More
ফেবু মুমিনদের সহজ সরলতা, কুযুক্তি ও শেষে চাপাতির কোপ !
ফেসবুকীয় মুমিন মানেই ‘ছাগল” অন্যকথায় ছাগু (ফেসবুক আবার তাদের সম্মানার্থে ছাগু সরাসরি লিখলে গোস্বা করেRead More
Comments are Closed