Evolution
C-Section and Evolution

C-Section and Evolution

সি সেকশান বা সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় বাচ্চা জন্মদানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ছে

বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বলছে যে, মানুষ আর পথিবীর বুকে চরে বেড়ানো অন্যান্য বাদঁর কিংবা বন-মানুষেরা অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ধারা বা লিনিয়েজ তৈরি করেছে। সে হিসেবে আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে বর্নিত এপ/প্রাইমেট থেকে। (সহজ করে বলতে গেলে, মানুষ প্রথমে মানুষ হিসাবে সৃষ্টি বা তৈরী হয়নি। সে অন্য প্রাণী থেকে পরিবর্তীত হতে হতে মানুষ হিসাবে যাত্রা শুরু করেছে বা মানুষ হয়েছে। তবে বানর থেকে পরিবর্তীত হয়ে মানুষ হয়েছে এটা যেমন ঠিক নয় আবার তেমনি কোন প্রাণী থেকে পরিবর্তীত হয়ে মানুষ হয়েছে এ ব্যাপারেও সঠিক ধারনা নেই )।

আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের গর্ভধারণের সময়কাল আমাদের পূর্বপুরুষ স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ। সাধারণত ৩৮-৪০ সপ্তাহ গর্ভে রেখে সন্তান জন্ম দেন একজন গর্ভবতী নারী। যেখানে একটি শিম্পাঞ্জি গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহ এবং গরিলা ও ওরাংওটাংরা প্রায় ৩৭ সপ্তাহ পর প্রসব করে। গর্ভধারণের সময়সীমা মস্তিষ্কের আকারের ওপর নির্ভরশীল। বিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে মানুষের ঘিলুর সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক শিশুদের আকৃতি বড় হয়েছে। আমাদের নারীরা অন্য স্তন্যপায়ীদের চেয়ে গড় শরীরের ভর বেশি দিয়ে সন্তান জন্ম দেন। নারীদের শ্রোণীচক্র ও জন্মনালীর আকার-আকৃতিও অসাধারণ পরিবর্তনশীল। বিশেষ করে দুই পায়ে ঋজু হাঁটার অভ্যাস তৈরির কারণে এগুলো সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে মানুষের জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তবে এ পরিবর্তনগুলো খুব বেশি দিন আগের বা বিবর্তনের আদি পর্যায় থেকে ঘটেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তন হচ্ছে মানুষের। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানব সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ থাকলেও ১০ হাজার বছর আগে ওই দু’টি কারণে হঠাৎ কঠিন হয়ে ওঠে।

যেমন বর্তমানে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্ম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মানব বিবর্তনে। গবেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বেশিরভাগ মায়ের শিশু জন্মের সময় সি সেকশন অপারেশনের প্রয়োজন হয় কারণ শ্রোণিচক্র পূর্বের তুলনায় সংকুচিত হয়ে গেছে।

এই কারণে যেখানে ১৯৬০ সালে হাজারে ৩০ জন মায়ের বার্থ ক্যানাল সংকুচিত থাকতো সেটা বেড়ে এখন হাজারে ৩৬ জন হয়েছে। বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে এই জিনটি পরবর্তী বংশধরে ছড়াতো না কারণ শিশুটি জন্মের সময়ই মারা যেত। অস্ট্রিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, সি সেকশন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কিন্তু সেটা কখনো এমন পর্যায়ে যাবে না যে স্বাভাবিক নিয়মে শিশুর জন্ম পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাবে।

ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব থিওরেটিক্যাল বায়োলজির গবেষক ড. ফিলিপ মিট্টেরোকার বলেন, বার্থ ক্যানেল দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে শিশু জন্মের পরিবর্তে সি সেকশন বেশি ব্যবহার করতে হওয়ার কারণ কী সে প্রশ্ন থেকেই এই গবেষণা। ১০০ বছর আগেও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যতীত এই শিশুদের জন্মই হতো না। ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ এর কারণে এই শিশুদের জিনও আর পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তো না।

বিবর্তন গবেষণায় একটা বড় আলোচনার বিষয় ছিল মানবশিশুর আকার বড় হলেও শ্রোণিচক্রের আকার কেন বড় হয়নি। মানবশিশুর মাথা অন্য প্রাইমেটদের চেয়ে বড়, অর্থাৎ শিম্পাঞ্জি বা অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে মানব মায়ের শিশু জন্ম দিতে অনেক বেশি কষ্ট হয়।

গবেষকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জন্ম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করে। সেখানেই তারা স্বাভাবিক বিবর্তনে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির হস্তক্ষেপ বা ‘অপোজিং ফোর্সের’ সন্ধান পান। আর এর ফলে আগের তুলনায় বড় শিশু জন্ম হচ্ছে যারা বেশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

গবেষক ফিলিপ মিট্টেরোকার বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য আধুনিক চিকিৎসার সমালোচনা করা নয় বরং এটা ব্যাখ্যা করা যে এর ফলে বিবর্তনে একটা প্রভাব ফেলছে।

Related Posts

Evolutionary Biology and Women

Protecting women is a man’s responsibility – this is a lesson rooted in evolutionary psychology

A common tendency across all societies is to take extra care of women. This isRead More

Mitochondrial Eve

নারীকে সুরক্ষা দেয়াটা পুরুষের কর্তব্য, এটা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা

সব সমাজের একটা কমন টেন্ডেন্সি হলো নারীকে এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এটা প্রকৃতির একটা নিয়ম। মাইটোকন্ড্রিয়ালRead More

Evolution through mutation

Evolution through mutation: Nature’s perfect strategy

Evolution is the gradual process of change in the living world through which species adaptRead More

Comments are Closed