Australia Bushfire
পরিবেশ, প্রতিবেশ হোক সুরক্ষিত – সবার জন্য
অক্সিজেন ফ্যাক্টরী !
কয়েকদিন আগে পুড়লো আমাজনের অক্সিজেন ফ্যাক্টরী। এখন পুড়ছে অস্ট্রেলিয়ায়। আমরা অনেকেই বিচলিত হই, উদ্বিগ্ন হই, মন কাঁদে প্রানের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন সরবরাহ করা এই বিশ্বে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু গাছের জীবন্ত দগ্ধ হওয়া দেখে। এই বিপর্যয়ের কিছু প্রাকৃতিক, কিছু মনুষ্যসৃষ্ট। আমাদের অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা, ফুলে, ফলে পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়ে আমাদের সৌনর্য্যপিপাসা নিবারন করা, আমাদের খাদ্য সরবরাহ করা এই গাছগুলোর এমন মৃত্যু ঠেকাতে ঠিক তাইই করা উচিৎ যা মানুষ করে কোন লোকালয়ে আগুন লাগলে।
চলুন জানি একটু অক্সিজেন সম্পর্কে। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে পরমাণুর চেয়েও বহুগুণ ক্ষুদ্র প্রায় শূন্য আয়তনে ঘটা একটি বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। এরপর কোটি কোটি বছর পেরিয়ে আসে আমাদের সৌরজগৎ, গ্রহ, উপগ্রহ। তখন কিন্তু বায়ুমণ্ডলে ছিল না কোন অক্সিজেন।
আজ থেকে প্রায় ৩৮০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রথম স্থায়ী সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। স্থায়ী সমুদ্র সৃষ্টির প্রায় ৭ লক্ষ বছর পর সমুদ্রের তলদেশে কয়েকটি প্রাথমিক উপাদান; বিগ ব্যাং এর পর সৃষ্ট প্রথম মৌল হাইড্রোজেন, নক্ষত্রে সৃষ্ট নাইট্রোজেন, কার্বন, এবং অক্সিজেন মিলে তৈরি করে পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা। DNA, যে সর্পিলাকার আণুবীক্ষণিক গঠনে লুকিয়ে আছে প্রাণের রহস্য। এটি ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম মহাবিপ্লব। এরপর DNA থেকে কালক্রমে তৈরি হল প্রথম অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া। যেটি শুধু তখন নয় এখনো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের দেহ সারা পৃথিবীর জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়ার একটা ‘চিড়িয়াখানা’।
এরপর প্রায় একশ কোটি বছর পৃথিবী শুধুমাত্র নানা ধরনের অণুজীবের দখলে ছিল। আদতে এইসব ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, হাইড্রা, প্রটোজোয়া এগুলোর অনেকে অনেক অবদান আমাদের পৃথিবীকে আমাদের উপযোগী করার জন্য। বিশেষ করে অক্সিজেন এর জন্য ! পৃথিবীটা মূলত ওদেরই, আমরা মানুষ ও অন্যান্য বড় জীবই প্রকৃত পরজীবী।
প্রায় ২৫০ কোটি বছর পূর্বে কিছু ‘বিশেষ’ ব্যাকটেরিয়া সূর্য থেকে আসা শক্তি ব্যবহার করে জীবন ধারণ করা শুরু করলো। জীবন ধারণের এ প্রক্রিয়ায় তারা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বর্জ্য পদার্থটি উৎপাদন ও নিঃসরণ শুরু করলো, যার নাম ‘অক্সিজেন’। সুতরাং আমরা এখন যে অক্সিজেনের সাহায্যে বেঁচে আছি তা আমাদের আদি-প্রাণের উচ্ছিষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। সেইসব ব্যকটেরিয়ার কল্যানেই আমাদের বেঁচে থাকা।
সেসময় সমুদ্রের পানি ছিলো প্রচুর লৌহ উপাদানে পরিপূর্ণ। ব্যাকটেরিয়া নির্গত অক্সিজেন লৌহ উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে তৈরি করে ভারি ধাতব-অক্সাইড যা থিতিয়ে জমা হয় সমুদ্র তলদেশে। শত কোটি বছর ধরে জমতে থাকা অক্সাইডের স্তর তৈরি করে লোহার বিশাল সংগ্রহশালা যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উত্থিত হয়ে এখন আমাদের কাছে “লোহার খনি” নামে পরিচিত। আপনার সুঁই থেকে শুরু করে জুতার পেরেক পর্যন্ত যত স্থানে লোহা রয়েছে তার সবার প্রাথমিক অবস্থান ও রূপান্তর একই।
পানিতে থাকা সকল অসম্পৃক্ত লৌহ উপাদান যখন অক্সাইডে পরিণত হলো, তখন অক্সিজেন মিশতে থাকলো সমুদ্রের পানিতে। সমুদ্রের পানি অক্সিজেনে পূর্ণ হবার পর অতিরিক্ত অক্সিজেন উঠে এলো সমুদ্র পৃষ্ঠ ছেড়ে বায়ুমণ্ডলে, বায়ুমণ্ডল পূর্ণ হলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনে।
এরপর প্রাণের বিবর্তন, উত্থান এসবে না যাই। আজ গাছ যে অক্সিজেন দিচ্ছে, প্রাণী নিচ্ছে সবই সেই অক্সিজেন। অক্সিজেন ফ্যাক্টরী পুড়লে আমাদের অনেকেরই ব্যাথা লাগে। আমরা বিচলিত হই, উদ্বিগ্ন হই।
পরিবেশ, প্রতিবেশ হোক সুরক্ষিত। সবার জন্য।
Comments are Closed